Get on Google Play

অনুপ্রেরণামুলক গল্প, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, ইতিবাচক আচার-আচারন ইত্যাদি
#4032
ডারউইনের জন্ম হয় ১৮০৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যাণ্ডের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পিতা ছিলেন নামকরা চিকিৎসক। মাত্র আট বছর বয়সে মাকে হারালেন ডারউইন। সেই সময় থেকে পিতা আর বড় বোনদের স্নেহচ্ছায়ায় বড় হয়ে উঠতে লাগলেন। নয় বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেন। চিরাচরিত পাঠ্যসূচীর মধ্যে কোন আনন্দই পেতেন না। তিনি লিখেছেন, বাড়িতে তাঁর ভাই একটি ছোট ল্যাবরেটরি গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে তিনি রসায়নের নানা মজার খেলা খেলতেন।
ষোল বছর বয়সে চার্লসকে ডাক্তারি পড়ার জন্য এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হল। যাঁর মন প্রকৃতির রূপ রস গন্ধে পূর্ণ হয়ে আছে, মরা দেহের হাড় অস্থি মজ্জা তাঁকে কেমন করে আকর্ষণ করবে! ঔষধের নাম মনে রাখতে পারতেন না। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিবরণ পড়তে বিরক্তি বোধ করতেন। আর অপরেশনের কথা শুনলেই আঁতকে উঠতেন। চার্লসের পিতা বুঝতে পারলেন ছেলের পক্ষে ডাক্তার হওয়া সম্ভব নয়। তাকে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি করা হল। উদ্দেশ্যে ধর্মযাজক করা।
সেই সময় কেমব্রিজের উদ্ভিদ বিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন হেনসেলো। হেনসলোর সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই তাঁর অনুরাগী হয়ে পড়লেন চালর্স। অল্পদিনের মধ্যেই গুরু-শিষ্যের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। কেমব্রিজ থেকে পাশ করে তিনি কিছুদিন ভূবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন। অপ্রত্যাশিতভাবে চার্লস ডারউইনের জীবনে কে অযাচিত সৌভাগ্যের উদয় হল। অধ্যাপক হেনসলোর কাছ থেকে একটি পত্র পেলেন ডারউইন। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বিগল (H.M.X. Begagle) নামে একটি জাহাজ দক্ষিণ আমেরিকা অভিযানে বার হবে। এই অভিযানের প্রধান হলেন ক্যাপ্টেন ফিজরয়। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীবজন্তু, গাছপালা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা এবং বৈশিষ্ট্যকে পর্যবেক্ষণ করা। এই ধরনের কাজে বিশেষজ্ঞ এবং অনুরাগী ব্যক্তিরাই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এই অভাবনীয় সৌভাগ্যের সুযোগকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইলেন না ডারউইন। ১৮৩১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর “বিগল” দক্ষিণ আমেরিকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করল। ক্যাপ্টেন ফিজরয়ের নেতৃত্বে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জাহাজ ভেসে চলল পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল ছাড়াও গালাপগোস দ্বীপপুঞ্জ, তাহিত্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, মালদ্বীপ, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে জাহাজ ঘুরে বেড়াল। এই সময়ের মধ্যে ডারউইন ৫৩৫ দিন কাটিয়েছিরেন সাগরে আর ১২০০ দিন ছিলেন মাটিতে। ডারউইন যা কিছু প্রত্যক্ষ করতেন তার নমুনার সাথে সুনির্দিষ্ট বিবরণ, স্থান, সংগ্রহের তারিখ লিখে রাখতেন। কোন তত্ত্বের দিকে তাঁর নজর ছিল না। বাস্তব তথ্যের প্রতিটি ছিল তাঁর আকর্ষণ। ২৪শে জুলাই ১৮৩৪ সাল। ডারউইন লিখেছেন “ইতিমধ্যে ৪৮০০ পাতার বিবরণ লিখেছি, এর মধ্যে অর্ধেক ভূবিদ্যা, বাকি বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর বিবরণ।”
”বিগল” জাহাজে চড়ে দেশভ্রমণের সময় মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর যখন ১৮৩৬ সালে ইংল্যাণ্ডে প্রত্যাবর্তন করলেন ডারউইন তখন তাঁর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু অদম্য মনোবল, বাড়ির সকলের সেবায় অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে উঠলেন। এইবার ডারউইন বইলেখার কাজে হাত দিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি গবেষণার কাজ। যতখানি ভালবাসতেন, লেখালেখি করতে ততখানিই বিরক্তি বোধ করতেন।
অবশেষে ২৪শে নভেম্বর ১৮৫৯ সালে ডারউইনের বই প্রকাশিত হল। বই-এর নাম The origin of species by means of Natural Selection or the preservation of Favoured Races in the struggle for life. (পরবর্তীকালে এই বই শুধু Origin of Species নামে পরিচিত হয়। প্রকাশের সাথে সাথে ১২৫০ কপি বই বিক্রি হয়ে যায়। বিবর্তনবাদের নতুন তত্ত্ব বাইবেলের আদম ইভের কাহিনী, পৃথিবীর সৃষ্টির কাহিনীকে বৈজ্ঞানিক তথ্যের বিশ্লেষণে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত করলেন। এই বইতে তিনি লিখেছেন আমাদের এই পৃথিবীতে প্রতিমুহূর্তে নতুন প্রাণের জন্ম হচ্ছে। জীবের সংখ্যা ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। কিন্তু খাদ্যের পরিমাণ সীমাদ্ধ। সেই কারণে নিয়ত জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে চলেছে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিরামহীন প্রতিযোগিতা। যারা পরিবেশের সাথে নিজেদের সামঞ্জস্য বিধান করতে পেরেছে তারাই নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু যারা পারেনি তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এই ধারাকেই বলা হয়েছে যোগ্যতমের জয় “Survival of the Fittest”। ডারউইনের বিবর্তনবাদের প্রসঙ্গে অনেকের ধারণা মানুষের উৎপত্তি বাঁদর থেকে। কিন্তু ডারউইন কখনো এই ধরণের কথা বলেননি। তাঁর অভিমত ছিল মানুষ এবং বাঁদর উভয়েই কোন এক প্রাগঐতিহাসিক জীবন থেকে বিবর্তিত হয়েছে। বাঁদররা কোনভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষ নয়, তার চেয়ে দূর সম্পর্কে আত্মীয় বলা যেতে পারে। ডারউেইনের মতে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব কারণ সমস্ত জীব জগতের মধ্যে যে সকলের চেয়ে বেশি যোগ্যতম। প্রকৃতপক্ষে মানুষ কোন স্বর্গচ্যুত দেবদূত নয়, সে বর্বরতার স্তর থেকে উন্নত জীবন। এগিয়ে চলাই তার লক্ষ্য। তিনি যখন শেষ বারের মত লণ্ডনে এসেছিলেন তখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর। এক বন্ধুর বাড়ির দরজার সামনে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বন্ধু বাড়িতে ছিলেন না। বন্ধুর বাড়ির চাকর ছুটে আসতেই ডারউইন বললেন, তুমি ব্যস্ত হয়ো না, আমি একটা গাড়ি ডেকে বাড়ি চলে যেতে পারব।
কাজের লোককে কোনভাবে বিব্রত না করে ধীরে ধীরে নিজের বাড়িতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি তিনি। ক্রমশেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে চলল। ডারউইন বুঝতে পারছিলেন তাঁর দিন শেষ হয়ে আসছে।
তিন মাস অসুস্থ থাকার পর ১৯শে এপ্রিল ১৮৮২ সালে, পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন চার্লস রবার্ট ডারউইন।

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]