- Wed Nov 06, 2019 1:14 pm#1975
বিসিএস এর সিলেবাস সাগরের সমান হলেও ক্যাডার হবার জন্য বিদ্যাসাগর হবার কোন দরকার নেই। কারণ, আপনি কতটুকু জানেন তার চেয়েও বড় হচ্ছে আপনি কতটুকু লিখে আসতে পারলেন।
একটি যুদ্ধে জয়লাভ করতে গেলে শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীর পাশাপাশি বুদ্ধিদীপ্ত রণনীতি প্রয়োজন। তেমনি লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে গেলে পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হবে।
যেমনঃ
১. খাতা হাতে পাওয়ার পরপরই মাথা ঠাণ্ডা করে আপনার ও এম আর ফর্মটি পূরণ করবেন। প্রথমে সাবধানতার সাথে নির্দিষ্ট ঘরগুলোতে বলপয়েন্ট কলম দিয়ে ফোটা দিবেন। এরপর পূণরায় যাচাই করে বৃত্ত ভরাট করবেন। এই ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধাপে ছোট একটি ভুল আপনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই এই কাজটি খুব সাবধানতার সাথে করবেন।
২. লিখিত পরীক্ষায় ভাল করার প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার খাতার প্রেজেন্টেশন ভাল করা। অর্থাৎ, আপনার খাতাটি হাতে নিয়েই যেন পরীক্ষকের ভাল লাগে এবং পড়ে দেখতে ইচ্ছে করে। কারণ, বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে থাকেন দেশের বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় প্রফেসরবৃন্দ। স্যাররা খুবই ব্যস্ত মানুষ। তাই হয়তো সব খাতা পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে পড়ে দেখার ইচ্ছা থাকলেও সময় পান না। সময় থাকলেও ধৈর্য না থাকাটাই স্বাভাবিক। ধরুন একজন স্যারের কাছে ২০০ টি খাতা গেল। তিনি হয়তো ২০ টি খাতা খুব ভালমতো পড়ে দেখবেন। বাকি খাতাগুলো হয়তো চোখ বুলিয়েই নাম্বার দিবেন। তাই আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে আপনার খাতাটি যাতে ঐ ২০ টি খাতার মধ্যে ঢুকে যায় সেটা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ, খাতা দিয়ে পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। লিখিত পরীক্ষার প্রার্থী সংখ্যা মোটামুটিভাবে ক্যাডার সংখ্যার ৭ গুণ। ফলে একজন স্যারের কাছে ২০০ টি খাতা গেলে সেখান থেকে ২৫-৩০ জন ক্যাডার হবে এমনটাই ধরে নেওয়া যায়। ফলে আপনার খাতাটি যদি ঐ ২০ টি খাতার মধ্যে ঢুকাতে পারেন তবে ক্যাডার হবার দৌড়ে আপনি এমনিতেই ৫০% এগিয়ে যাবেন।
এজন্য করণীয়ঃ
ক) প্রথমেই মূল খাতাটা সুন্দর করে মার্জিন করবেন। মার্জিন করার জন্য স্টীলের লম্বা স্কেল নিয়ে যাবেন। উপরে ও বামে যাস্ট স্কেলের সমান প্রস্থ করে মার্জিন টানবেন। ভুলেও মার্জিন মোটা করে পৃষ্ঠা বাড়ানোর ধান্দা করবেন না। কখনই প্লাস্টিকের ছোট স্কেল নিবেন না। এতে অযথা আপনার সময় নষ্ট হবে।
খ) হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করবেন। হাতের লেখা পছন্দ না হলে খাতা ভাল করে পড়ে দেখার ইচ্ছা কমে যায়।
গ) খাতায় আপনার স্বাভাবিক লেখাটাই লিখবেন। অর্থাৎ, এক পৃষ্ঠায় ১২-১৪ লাইন। অযথা ফাকফাক করে ও বড় বড় করে লিখে পৃষ্ঠা বাড়াবার চেষ্টা করবেন না। এতে স্যাররা বিরক্ত হবেন।
ঘ) খাতা যথাসম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। অযথা কালির দাগ বা ঘষামাজা করবেন না। কোন উত্তর ভুল লিখলে এক টান দিয়ে কেটে দিয়ে নিচে সঠিক উত্তর লিখবেন।
ঙ) কালো ও নীল দুই ধরণের বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করবেন। অন্য কোন কালি ব্যবহার করবেন না। উত্তরের শিরোনাম ও পয়েন্ট গুলো নীল কালিতে লিখবেন। চিত্র আঁকলে পেনসিল দিয়ে আঁকবেন।
৩. লিখিত পরীক্ষায় অনেক কম সময়ে অনেক বেশি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। তাই সময় জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিটি মিনিটের হিসাব রাখতে হবে আপনাকে। প্রত্যকটা প্রশ্নের উত্তর সময় হিসাব করে লিখবেন। যেমন ২০০ নাম্বারের পরীক্ষার ২৪০ মিনিট সময়। অর্থাৎ, প্রতি নাম্বারের জন্য ১.২ মিনিট। ফলে যে প্রশ্নে ১০ নাম্বার সেখানে আপনার সময় ১২ মিনিট। যে প্রশ্নে ৫ নাম্বার সেখানে আপনার সময় ৬ মিনিট। চেষ্টা করবেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লেখা শেষ করতে। ৬ মিনিটের জায়গায় ৭ মিনিট হতে পারে (সেক্ষেত্রে অপর প্রশ্নের জন্য থাকবে ৫ মিনিট)। কিন্তু কখনই ৬ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিট খরচ করবেন না ( সেক্ষেত্রে অপর প্রশ্নের জন্য থাকবে ২ মিনিট!!!!!!!!!)। তাই সময় মেইনটেইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৪. যে প্রশ্নগুলো তুলনামূলক ভাবে ভাল পারেন সেগুলো প্রথমে লিখবেন তবে অবশ্যই সময় ক্যালকুলেট করে লিখবেন। যা যা পারেন তার সবকিছু লিখে আসার লোভ সংবরণ করবেন। কারণ, সময় নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আপনাকে হয়তো কিছু প্রশ্নের জানা উত্তর না লিখেই চলে আসতে হবে।
৫. পরীক্ষায় অবশ্যই ফুল অ্যান্সার করবেন। কোন প্রশ্ন ছেড়ে দিবেন না।যদি এমন হয় যে প্রশ্নটি একেবারেই অজানা তবুও চেষ্টা করবেন ৪-৫ লাইন কিছু লিখে আসতে। স্যার যদি দয়া করে ১/১.৫ দেন তবে ক্ষতি কি? এই সামান্য নাম্বারের জন্য আপনার ক্যাডার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অথবা ননক্যাডার থেকে ক্যাডার হয়ে যেতে পারেন।
অবশ্যই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছাবেন। পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বাসা থেকে বের হবেন। যথাসম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। কলম, স্কেল, পেনসিল, রাবার ছাড়া কোন অযাচিত জিনিস সাথে নিবেন না। শুধুমাত্র গণিত পরীক্ষায় সাধারণ ক্যালকুলেটর নিতে পারবেন।
নিজে যা পারবেন তাই লিখবেন। কারও খাতা দেখার বা কাউকে কিছু দেখাবার চেষ্টা করবেন না। অন্যের খাতা দেখে হয়তো ২/৪ নাম্বার পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ক্যাডার হওয়া যাবে না। ভুলেও ইনভিজিলেটরের সাথে কোন খারাপ আচরণ করবেন না।
সর্বোপরি নিজের উপর আস্থা রাখুন, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন আর যুদ্ধ জয় করুন।
শুভকামনায়,
Amrita Sutradhar
সহকারী পুলিশ সুপার
৩৬তম বিসিএস
মেধাক্রমঃ ৪র্থ।
একটি যুদ্ধে জয়লাভ করতে গেলে শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীর পাশাপাশি বুদ্ধিদীপ্ত রণনীতি প্রয়োজন। তেমনি লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে গেলে পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হবে।
যেমনঃ
১. খাতা হাতে পাওয়ার পরপরই মাথা ঠাণ্ডা করে আপনার ও এম আর ফর্মটি পূরণ করবেন। প্রথমে সাবধানতার সাথে নির্দিষ্ট ঘরগুলোতে বলপয়েন্ট কলম দিয়ে ফোটা দিবেন। এরপর পূণরায় যাচাই করে বৃত্ত ভরাট করবেন। এই ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধাপে ছোট একটি ভুল আপনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই এই কাজটি খুব সাবধানতার সাথে করবেন।
২. লিখিত পরীক্ষায় ভাল করার প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার খাতার প্রেজেন্টেশন ভাল করা। অর্থাৎ, আপনার খাতাটি হাতে নিয়েই যেন পরীক্ষকের ভাল লাগে এবং পড়ে দেখতে ইচ্ছে করে। কারণ, বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে থাকেন দেশের বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় প্রফেসরবৃন্দ। স্যাররা খুবই ব্যস্ত মানুষ। তাই হয়তো সব খাতা পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে পড়ে দেখার ইচ্ছা থাকলেও সময় পান না। সময় থাকলেও ধৈর্য না থাকাটাই স্বাভাবিক। ধরুন একজন স্যারের কাছে ২০০ টি খাতা গেল। তিনি হয়তো ২০ টি খাতা খুব ভালমতো পড়ে দেখবেন। বাকি খাতাগুলো হয়তো চোখ বুলিয়েই নাম্বার দিবেন। তাই আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে আপনার খাতাটি যাতে ঐ ২০ টি খাতার মধ্যে ঢুকে যায় সেটা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ, খাতা দিয়ে পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। লিখিত পরীক্ষার প্রার্থী সংখ্যা মোটামুটিভাবে ক্যাডার সংখ্যার ৭ গুণ। ফলে একজন স্যারের কাছে ২০০ টি খাতা গেলে সেখান থেকে ২৫-৩০ জন ক্যাডার হবে এমনটাই ধরে নেওয়া যায়। ফলে আপনার খাতাটি যদি ঐ ২০ টি খাতার মধ্যে ঢুকাতে পারেন তবে ক্যাডার হবার দৌড়ে আপনি এমনিতেই ৫০% এগিয়ে যাবেন।
এজন্য করণীয়ঃ
ক) প্রথমেই মূল খাতাটা সুন্দর করে মার্জিন করবেন। মার্জিন করার জন্য স্টীলের লম্বা স্কেল নিয়ে যাবেন। উপরে ও বামে যাস্ট স্কেলের সমান প্রস্থ করে মার্জিন টানবেন। ভুলেও মার্জিন মোটা করে পৃষ্ঠা বাড়ানোর ধান্দা করবেন না। কখনই প্লাস্টিকের ছোট স্কেল নিবেন না। এতে অযথা আপনার সময় নষ্ট হবে।
খ) হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করবেন। হাতের লেখা পছন্দ না হলে খাতা ভাল করে পড়ে দেখার ইচ্ছা কমে যায়।
গ) খাতায় আপনার স্বাভাবিক লেখাটাই লিখবেন। অর্থাৎ, এক পৃষ্ঠায় ১২-১৪ লাইন। অযথা ফাকফাক করে ও বড় বড় করে লিখে পৃষ্ঠা বাড়াবার চেষ্টা করবেন না। এতে স্যাররা বিরক্ত হবেন।
ঘ) খাতা যথাসম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। অযথা কালির দাগ বা ঘষামাজা করবেন না। কোন উত্তর ভুল লিখলে এক টান দিয়ে কেটে দিয়ে নিচে সঠিক উত্তর লিখবেন।
ঙ) কালো ও নীল দুই ধরণের বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করবেন। অন্য কোন কালি ব্যবহার করবেন না। উত্তরের শিরোনাম ও পয়েন্ট গুলো নীল কালিতে লিখবেন। চিত্র আঁকলে পেনসিল দিয়ে আঁকবেন।
৩. লিখিত পরীক্ষায় অনেক কম সময়ে অনেক বেশি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। তাই সময় জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিটি মিনিটের হিসাব রাখতে হবে আপনাকে। প্রত্যকটা প্রশ্নের উত্তর সময় হিসাব করে লিখবেন। যেমন ২০০ নাম্বারের পরীক্ষার ২৪০ মিনিট সময়। অর্থাৎ, প্রতি নাম্বারের জন্য ১.২ মিনিট। ফলে যে প্রশ্নে ১০ নাম্বার সেখানে আপনার সময় ১২ মিনিট। যে প্রশ্নে ৫ নাম্বার সেখানে আপনার সময় ৬ মিনিট। চেষ্টা করবেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লেখা শেষ করতে। ৬ মিনিটের জায়গায় ৭ মিনিট হতে পারে (সেক্ষেত্রে অপর প্রশ্নের জন্য থাকবে ৫ মিনিট)। কিন্তু কখনই ৬ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিট খরচ করবেন না ( সেক্ষেত্রে অপর প্রশ্নের জন্য থাকবে ২ মিনিট!!!!!!!!!)। তাই সময় মেইনটেইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৪. যে প্রশ্নগুলো তুলনামূলক ভাবে ভাল পারেন সেগুলো প্রথমে লিখবেন তবে অবশ্যই সময় ক্যালকুলেট করে লিখবেন। যা যা পারেন তার সবকিছু লিখে আসার লোভ সংবরণ করবেন। কারণ, সময় নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আপনাকে হয়তো কিছু প্রশ্নের জানা উত্তর না লিখেই চলে আসতে হবে।
৫. পরীক্ষায় অবশ্যই ফুল অ্যান্সার করবেন। কোন প্রশ্ন ছেড়ে দিবেন না।যদি এমন হয় যে প্রশ্নটি একেবারেই অজানা তবুও চেষ্টা করবেন ৪-৫ লাইন কিছু লিখে আসতে। স্যার যদি দয়া করে ১/১.৫ দেন তবে ক্ষতি কি? এই সামান্য নাম্বারের জন্য আপনার ক্যাডার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অথবা ননক্যাডার থেকে ক্যাডার হয়ে যেতে পারেন।
অবশ্যই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছাবেন। পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বাসা থেকে বের হবেন। যথাসম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। কলম, স্কেল, পেনসিল, রাবার ছাড়া কোন অযাচিত জিনিস সাথে নিবেন না। শুধুমাত্র গণিত পরীক্ষায় সাধারণ ক্যালকুলেটর নিতে পারবেন।
নিজে যা পারবেন তাই লিখবেন। কারও খাতা দেখার বা কাউকে কিছু দেখাবার চেষ্টা করবেন না। অন্যের খাতা দেখে হয়তো ২/৪ নাম্বার পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ক্যাডার হওয়া যাবে না। ভুলেও ইনভিজিলেটরের সাথে কোন খারাপ আচরণ করবেন না।
সর্বোপরি নিজের উপর আস্থা রাখুন, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন আর যুদ্ধ জয় করুন।
শুভকামনায়,
Amrita Sutradhar
সহকারী পুলিশ সুপার
৩৬তম বিসিএস
মেধাক্রমঃ ৪র্থ।